রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৭:২১ অপরাহ্ন
এর কারণ হিসেবে উঠে আসছে বেশ কিছু তথ্য। কেউ বলছে, নিয়োগ-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যেসব কর্মকর্তা জড়িত তাদের আত্মীয় স্বজন পরিচয়ে অনেকেই চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা নিচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে চাকরিও মিলছে এ প্রার্থীদের। যার ফলে প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও নিয়োগ-প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের নিজস্ব লোক খুঁজতে দেখা যায়।
এভাবে দু’একটি ক্ষেত্রে নিয়োগ নিশ্চিত হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চাকরিপ্রার্থীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, এ ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে তারা বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— শিক্ষক নিয়োগপত্র প্রকাশের আগে অথবা পরে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
সেখানে বলা হয়, কোনো কোনো মহল বা ব্যক্তি নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনকারীদেরকে প্রতারণামূলক তথ্য দিয়ে অবৈধ পন্থায় চাকরি দেয়ার প্রস্তাব অথবা আশ্বাস দিয়ে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করছে।
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ, আবেদন যাচাই শেষে প্রার্থীদের কাছে অনলাইনে প্রবেশপত্র পাঠানো, পরীক্ষা কেন্দ্রের সিট-বিন্যাস, একাধিক সেট প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ ও উত্তরপত্র মূল্যায়ন শেষে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশসহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়ে থাকে।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রতারণার মাধ্যমে বা অনৈতিকভাবে অর্থের বিনিময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ধরনের প্রতারণা/প্রলোভনের সাথে না জড়ানোর জন্য পরামর্শ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে এরূপ প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধও জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘আমরা সবসময় সতর্ক করে আসছি, কেউ যেনো চাকরির বিষয়ে আর্থিক লেনদেন না করে।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর নিয়োগ সার্কুলার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার আগে জনস্বার্থে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করি। সেখানে চাকরিপ্রার্থীরা যাতে কোনো ব্যক্তির কাছে অর্থ দিয়ে প্রতারণার শিকার না হন সে বিষয়ে বলা হয়। এ ছাড়াও পরীক্ষা পদ্ধতি প্রক্রিয়া বিস্তারিত উল্লেখ থাকে।
বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করলে কেউ প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।’
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে প্রতিবার শিক্ষক নিয়োগের আগে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জনসাধারণকে সতর্ক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণেরও সচেতন হওয়া উচিত। তা ছাড়া যে কারো সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার আগে সমগ্র নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা নেয়া উচিত।
তা ছাড়া প্যানেল পদ্ধতিতে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এমন খবরে অনেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতারা আমাদের মন্ত্রী এবং সচিবকে চিঠি দেয়া শুরু করেছিলেন এবং অনেকের ধারণা ছিলো, এ পদ্ধতির মধ্য দিয়ে নানাভাবে তদবির করলে শিক্ষক নিয়োগ পাওয়া সম্ভব হবে।
পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হয়। সেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল মাঠপর্যায়ে তথাকথিত প্যানেল থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে নিরীহ প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে মর্মে বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারের গোচরীভূত হয়েছে।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, শিক্ষক নিয়োগের কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কোনো প্যানেল করার বিষয় উল্লেখ ছিলো না। ফলে এ নিয়োগে কোনো প্যানেল বা অপেক্ষমান তালিকা কখনোই করা হয়নি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ একটি রুটিন প্রক্রিয়া। ফলে ভবিষ্যতে পদ শূন্য হবে বিবেচনা করে প্যানেল করার কোনো সুযোগ নেই বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার ৩০০ জন প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক ও ১০ হাজার শূন্যপদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে ওয়েবসাইট আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-প্রক্রিয়া শুরু করতে ডিপিই থেকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এতে আগের সব কোটা বাতিল করা হয়েছে।
কোটাগুলো হলো— মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, আনসার-ভিডিপি, প্রতিবন্ধী ও জেলা কোটা। সহকারী শিক্ষকদের যোগদানের পর ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করায় কোটা বাতিল করা হয়েছে। নির্ধারিত ৬০ শতাংশ নারী, ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা বহাল হয়েছে।