রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৬:৫৮ অপরাহ্ন
নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণে দগ্ধ মাদারীপুর সদর উপজেলার আবুল বাসার মোল্লা (৪০) মারা গেছেন। সোমবার সকালে ১০টার দিকে উপজেলার ছিলারচর ইউনিয়নের চরলক্ষীপুর গ্রামে তার লাশ দাফন করা হয়।
নিহত আবুল বাসার মোল্লা নারায়ণগঞ্জের একটি ওষুধ কোম্পানীর মেশিন অপারেটর হিসেবে চাকরি করতেন। আবুল বাসার ছিলারচর ইউনিয়নের চরলক্ষীপুর গ্রামের মৃত মালেক মোল্লা ও আলিমন নেছার ছেলে। যেই মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে তার পাশেই একটি মেস বাড়িতে ভাড়া থাকতেন তিনি।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন আবুল বাসার মোল্লা। তার এমন মৃত্যু কোন ভাবেই মানতে পারছে না তার পাঁচ সন্তান, স্ত্রী ও স্বাজনেরা। আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে বাড়ির চারিপাশ।
সোমবার সরেজমিনে আবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে মানুষের ভিড়। নিহতের পরিবারের সবাই একে অন্যকে জড়িয়ে কান্না করছে। প্রতিবেশিরাও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন।
স্বামীকে হারিয়ে অনেকটাই বাক্রুদ্ধ তাজিয়া বেগম। স্বামীর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওগের বাজানে আমাগো এইভাবে ছাইড়া চইলা যাইতে পারে না। পাঁচ পোলা মাইয়া লইয়া আমি কার কাছে হাত পাতুম। বড় পোলাডা কলেজে পড়ে, তিনডা মাইয়া এখনো ছোট। ছোট পোলাডা ওর বাজান রে ছাড়া কিছুই বুঝে না। খালি কয়, বাজান কই মা, বাজানের কাছে লইয়া যাও।’
জানা গেছে, শুক্রবার রাতে মসজিদে ওই ভয়াবহ বিস্ফোরণে আবুল বাসার দগ্ধ হন। শনিবার সকালে তার সহকর্মীদের কাছ থেকে মুঠোফোনে খবর আসে আবুল গুরতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। খবর পাওয়া মাত্রই শনিবার সকালে আবুলের স্ত্রী তাজিয়া বেগম তার ছেলেকে নিয়ে মাদারীপুর থেকে চলে যান ঢাকায়। শনিবার বিকেলে ঢাকা পৌঁছে ছুটে চলে যান জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। এরপর থেকে সেখানকার অভ্যর্থনাকক্ষে অপেক্ষা করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খবর আসে আবুল আর নেই। ওই রাতে স্বামীর লাশ নিয়ে দেশের বাড়ি মাদারীপুরে ফেরেন। পরে সোমবার সকাল ১০টার দিকে তার লাশ দাফন করা হয়।
নিহত আবুল বাসারের বড় ছেলে হাবিবুর বাসার বলেন, ‘আব্বায় মাস শেষে টাকা পাঠাইতো। সেই টাকায় আমার সব ভাই বোনের পড়ালেখার খরচ চলতো। এখন আর টাকা পাঠাইবে কে? আমাদের সবার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেল।’
প্রতিবেশী ইদ্রিস আলী বলেন, আবুল বাসার অনেক ভালো একজন মানুষ ছিল। নামাজ রোজা কখনোই কিছু বাদ দিতো না। নারায়ণগঞ্জে ছোট্ট একটা চাকরি করতো, আর্থিক অবস্থা খারাপ। তবুও কাউকে নিজের কষ্টটা বুঝতে দিতো না।